ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

রাসূলুল্লাহ (সা.) : যিনি ছিলেন সততার অনন্য উপমা

Daily Inqilab আব্দুল্লাহ আলমামুন আশরাফী

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম

সততা। মানবীয় গুণাবলীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি দিক। পবিত্র কুরআন মাজীদে অনন্য এ গুণটি নিজের মাঝে পরম মমতায় ধারণ করতে মুমিনদেরকে বিশেষভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো’। (সূরা তাওবা : ১১৯)। আয়াতের বার্তা পরিষ্কার। কুরআন মাজীদ মুসলিম সমাজকে আহ্বান করছে সততার মতো এই সুউচ্চ গুণে গুণান্বিত হওয়ার প্রতি, সৎ ব্যক্তিদের সঙ্গী হওয়ার প্রতি। কেননা, সততাই হলো সকল কল্যাণের চাবিকাঠি।

সততার মত এই মহান গুণের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন একজন উত্তম দৃষ্টান্ত ও আদর্শ। সততার সর্বোচ্চ চূড়ায় ছিল তার অবস্থান। নবুওয়ত প্রাপ্তিরও বহু আগে মক্কার কুরাইশদের পক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহ (সা.) কে আস-সাদিক (সত্যবাদী) এবং আল-আমীন (আমানতদার) উপাধি প্রদান করা হয়েছিল। এই বিশ্বস্ততার বিমল গুণে মুগ্ধ কুরাইশরা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তাদের মূল্যবান সম্পদ গচ্ছিত রাখতো।

নবীজী (সা.) যখন ইসলামের দাওয়াত দেয়া শুরু করেন তখন তাঁর আত্মীয় স্বজন ও তাঁর বংশের লোকেরা শত্রুতা, বিদ্বেষ, ঘৃণা ও বিরোধিতা শুরু করে। এমন ভয়াল প্রতিকূল মুহূর্তেও তিনি সততা ও আমানতদারীর প্রকাশ ঘটিয়ে তাদের গচ্ছিত সম্পদ যথাযথভাবে তাদের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে যান।
আল্লাহ তায়ালা যখন নবীজী (সা.) কে নিজের নিকটাত্মীয়দের আখিরাতের প্রতি সতর্ক করার নির্দেশনা প্রদান করেন, তখন তিনি সাফা পর্বতে আরোহণ করে সকলকে ডেকে বলেন : ‘বলো তো, আমি যদি তোমাদের বলি, অশ্বারোহী শত্রুসৈন্য উপত্যকায় এসে পড়েছে, তারা তোমাদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করতে উদ্যত, তোমরা কি আমার কথা বিশ্বাস করবে? তারা বলল, হ্যাঁ, আমরা সর্বদা তোমাকে কথা ও কাজে সত্যবাদী পেয়েছি।’ (সহীহ বুখারী : ৪৭৭০)।

এভাবে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সততার ঘোষণা দিয়েছে। ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে তা লিপিবদ্ধ। হাজার বছর ধরে মানবসভ্যতা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সততার সৌরভে সুরভিত। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সততার ব্যাপারে সৃষ্টিজগতের প্রতিপালক স্বয়ং আল্লাহ তায়া’লা সাক্ষ্য রয়েছে। আল্লাহ তায়া’লা বলেন : ‘যে ব্যক্তি সত্য কথা নিয়ে এসেছে এবং নিজেও তা বিশ্বাস করে এরূপ লোকই মুত্তাকী।’ (যুমার : ৩৩)।

সততার অনন্য উপমা রাসূলুল্লাহ (সা.) সর্বদা কথা ও কাজে অন্যদেরকেও সত্য ও সততার প্রতি উৎসাহিত করতেন। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : তোমরা মিথ্যাচার বর্জন করো। কেননা মিথ্যা পাপাচারের দিকে ধাবিত করে এবং পাপাচার জাহান্নামে নিয়ে যায়। কোন ব্যক্তি সর্বদা মিথ্যা বলতে থাকলে এবং মিথ্যচারকে স্বভাবে পরিণত করলে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর নিকট তার নাম মিথ্যুক হিসেবেই লেখা হয়। আর তোমরা অবশ্যই সততা অবলম্বন করবে।

কেননা সততা নেক কাজের দিকে পথ দেখায় এবং নেক কাজ জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। আর কোন ব্যক্তি সর্বদা সততা বজায় রাখলে এবং সততাকে নিজের স্বভাবে পরিণত করলে, শেষ পর্যন্ত আল্লাহর নিকটে তার নাম পরম সত্যবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়। (সুনানে আবু দাউদ-৪৯৮৯)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মহত্ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে যে, তিনি সন্দেহপূর্ণ বিষয় এড়িয়ে চলতেন। এ ব্যাপারে তিনি নিজে যেমন সচেতন ছিলেন, অন্যদেরও এ ব্যাপারে সচেতন থাকার শিক্ষা দিতেন। সত্য ও সততার প্রতি ভালোবাসা থেকেই তিনি এমনটা করতেন এবং বলতেন। ‏ ‏

আবুল হাওরা আস-সাদী (রাহ.) থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, হাসান ইবনু আলী (রা.)-কে আমি প্রশ্ন করলাম, আপনি রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে কোন কথাটা মনে রেখেছেন? তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর এই কথাটি মনে রেখেছি, যে বিষয়ে তোমার সন্দেহ হয়, তা ছেড়ে দিয়ে যাতে সন্দেহের সম্ভাবনা নেই তা গ্রহণ কর। যেহেতু, সত্য হলো শান্তি ও স্বস্তি এবং মিথ্যা হলো দ্বিধা-সন্দেহ। (জামে তিরমিজি : ২৫১৮)।

সত্যের প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই আগ্রহ ও ভালোবাসা সাময়িক ছিল না। বরং তিনি সর্বদা জীবনের সকল কাজ ও কর্মে সত্যের উপর অটল অবিচল থেকেছেন। সত্য ছিল তাঁর স্বভাবজাত। এ কারণে তিনি মজা ও হাস্যরসের সময়ও সত্য বলতেন। যদিও অনেকে মনে করেন, এইসব একটু মিথ্যার আশ্রয় নেয়া দোষের কিছু নয়।

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত : একদা এক লোক নবী (সা.) এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে একটি আরোহীর ব্যবস্থা করে দিন। নবী (সা.) বললেন, আমি তোমাকে আরোহণের জন্য একটি উটনীর বাচ্চা দিবো। লোকটি বললো, উটনীর বাচ্চা দিয়ে আমি কি করবো? নবী (সা.) বললেন, সকল উটকে তো উটনীই জন্ম দেয়। (সুনানে আবু দাউদ : ৪৯৯৮)।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দুইবার এগিয়ে গিয়েও জেতা হলো না মায়ামির

দুইবার এগিয়ে গিয়েও জেতা হলো না মায়ামির

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো